এক নজরে দেখে নিন কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কলা আমাদের সবার খুব প্রিয় একটি ফল। কলা খায় না বা খেতে পারি না এমন মানুষ একটাও নাই। কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি না। আমাদের উচিত কলা খাওয়ার পাশাপাশি কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা।
কলা অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। এবং কলা আমরা বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকি। অনেকেই পাকা কলা পছন্দ করি আবার অনেকেই তরকারিতে কলা ব্যাবহার করি। কলার আমরা সাধারণত দুইটি কালার দেখতে পাই। কাচা অবস্থায় সবুজ এবং কলা পাকলে হলুদ রং দেখতে পায়। রাসায়নিক পরিবর্তনের কারনে কলা পাকলে হলুদ রং ধারন করে।
কলার পুষ্টিগুণ
কলা মজাদার এবং সুস্বাদু একটি ফল। কলা চিনি না আমরা এমন কেউ নেই। কিন্তু কলার পুষ্টিগুন জানি না এমন অনেকেই আছি। চলুন তাহলপ জেনে নেই কলার পুষ্টিগুণ। কলাতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। কলাতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কলাতে থাকে ফাইবার। একটি কলাতে থাকে ৪৬৭ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম এবং ১ mg সোডিয়াম। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি-৬, কার্বোহাইড্রেট এবং বিভিন্ন খনিক পদার্থ।
কলার উপকারিতা
হার্ট ভালো রাখে
কলাতে থাকা পটাশিয়াম আমাদের হার্ট ভালো রাখে। গবেষণা অনুযায়ী কলা হলো পটাশিয়ামের খুব ভালো একটি উৎস। শরিরের পর্যাপ্ত পরিমান পটাশিয়াম না থাকার কারনে হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে হার্ট ভালো থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, কার্বোহাইড্রট। কলাতে থাকা এসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কলা খেলে আমাদের রক্ত পরিষ্কার হয়। রক্ত ভালোভাবে চলাচলের জন্য কলাতে থাকা উপাদানের ভুমিকা রয়েছে। প্রতিদিন নিয়মানুযায়ী একাটি কলা খেতেই পারি।
আরও পড়ুন গাজরের উপকারিতা : গুনাগুন, গুরুত্ব ও স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং আমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য
হজমের সমস্যার সমাধান করে।
কলা হজমের সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। কলার মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের অন্ত্রের সমস্যা দুর করে। পাকস্থলীর উন্নতির জন্য আমাদের কলা খাওয়া দরকার। কলাতে থাকা ফাইবারের কারনেই পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। কলা রক্তের শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণে রাখে। এবং দেহে চর্বি শোষণ করে নিতে সাহায্য করে। কলা অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। যার কারনে অন্ত্রের সমস্যা দুর হয়। পাকস্থলীর এসিড কমাতে কলার ভূমিকা রয়েছে।
মস্তিষ্ক ভালো রাখে।
কলাতে থাকা ভিটামিন-বি৬ মস্তিষ্ক ভালো রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরিরের সমস্ত কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ কর আমাদের ব্রেইন। তাই আমাদের প্রতিনিয়ত ভিটামিন-বি৬ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার দরকার। যারা প্রতিদিন কলা খায় তাদের দেহে প্রয়োজনমতো ভিটামিন-বি৬ থাকে। যার ফলে তাদের মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে। কলাতে থাকা পটাশিয়াম মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন প্রবাহ ঠিক রাখে। এছাড়াও কলাতে থাকা উপাদানগুলো মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন মধু খাওয়ার উপকারিতা ও মধুর ঔষধি গুনাগুন
প্রয়োজনিয় শক্তি বৃদ্ধি করে।
কলাতে রয়েছে অ্যামিনো এসিড, শর্করা, এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। কলার এই উপাদানগুলো আমাদের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।আমাদের দেহের প্রয়োজনিয় শক্তির জন্য আমাদের উচিত কলা খাওয়ার।কলা দেহের রক্ত চলাচল ঠিক রেখে শরিরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। মাত্র ২ টি কলা ৯০ মিনিট পরিশ্রম করার শক্তি যোগান দেয়।
কলা মাসিকের যন্ত্রণা কমায়।
আমরা জানি যে মাসিকের সময় মেয়েরা অনেক ব্যাথা অনুভব করে। মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যাথাটা অনেক প্রখর হয়। এই রকম যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথা কমাতে বা মুক্তি পেতে কলা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কলাতে থাকে ভিটামিন-বি৬ এবং পটাশিয়াম। এই উপদানগুলো জরায়ুর পেশিকে শক্তি প্রদান করে। তাই পিরিয়ডের সময় কলা খাওয়া ভালো।
কলা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কলা দেহের অতিরিক্ত চিনিকে ফ্যাট হিসাবে জমতে দেয় না। কলাতে থাকা ফাইবার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। কলা অনেক সময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখে। তাই অতিরিক্ত বা বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়।
কলার ক্ষতিকর দিক
- কলাতে রয়েছে অনেক বেশি পটাশিয়াম। তাই অতিরিক্ত কলা খেলে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের উচিৎ পরিমানমতো কলা খাওয়া। এক দিনে ২ টার বেশি কলা না খাওয়ায় ভালো।
- কলা শর্করা সমৃদ্ধ একটি নরম খাবার। তাই কলা খাওয়ার পরে ব্রাশ করে নিন। না হলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের কলা খাওয়ানোর ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ৪. কলাতে রয়েছে অনেক বেশি অ্যামিনো এসিড। তাই অতিরিক্ত কলা খেলে রক্তনালিতে সমস্যা হতে পারে।
- এলার্জি জনিত সমস্যা থাকলে কলাগাছের মুকুল বা কান্ড খাবেন না।
আমাদের শেষ কথা
উপরে আমরা কলার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কলার যেমন উপকারিতা আছে তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই আমাদের উচিৎ অতিরিক্ত কলা না খাওয়া। নিয়মিত প্রতিদিন ১-২ টা কলা খেলেই দেহের চাহিদা পূরণ হয়। উচ্চ পটাশিয়াম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ এই খাবার নিয়ম মেনে যতটুকু দরকার তার থেকে বেশি খাওয়া যাবে না।