নিয়মিত পাকা বা কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের প্রতিটি খাবারের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা উচিত। পেঁপে খুব সুস্বাধু একটি জনপ্রিয় ফল। অনেক গুনে ভরপুর এই ফল আমাদের দেহের অনেক উপাদানের চাহিদা পূর্ণ করে। পেঁপের সঠিক উপকারিতা পাওয়ার জন্য অনেকেই খালি পেটে পেঁপে খেয়ে থাকেন। খালি পেটে পেপে খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে বিকেলের পরে পেঁপে না খাওয়া ভালো। আজকে আমরা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
সুস্বাধু এই ফলটি আমরা কাঁচা খেতে পারি। পেঁপে সবজি হিসাবেও রান্না করে খেতে পারি। আবার পাকা পেঁপের তো অতুলনীয় স্বাদ রয়েছে। পেঁপে খেলে ওজন কমে, ত্বক পরিষ্কার হয়, চুল ভালো থাকে এমন অসাধারণ অনেক উপকার পাওয়া যায় পেঁপে থেকে। তাই আমাদের পরিমান মতো নিয়ন অনুযায়ী পেঁপে খাওয়া দরকার। পেঁপে পরিমান মতো খেতে হবে কারণ পেঁপের কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
পেঁপের পুষ্টিগুণ
সুস্বাধু এই পেঁপেতে রয়েছে অনেক উপাদান। পেঁপের পুষ্টিগুণ গুলো হলো, এতে রয়েছে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন এ, সি, ভিটামিন কে এবং নিয়াসিন। এছাড়াও পেঁপেতে রয়েছে ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, এবং প্যাপেইন নামক এনজাইম ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পদার্থ।
১০০ গ্রাম পেঁপেতে পাওয়া যায় খনিজ পদার্থ ০.৫ মিলিগ্রাম, ৬৯ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৬.০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৫৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, খাদ্যশক্তি ৩২ কিলোক্যালরি এবং ৭.২ গ্রাম শর্করা।
আরও পড়ুন : জয়া স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার এবং জয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম
পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা
হার্টের সমস্যায় পেঁপে অনেক উপকার
পেঁপের মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও পেঁপেতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি এবং ভিটামিন কে। পেঁপের মধ্যে থাকা এসব উপাদান কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে হার্টের সমস্যা দূর হয়। স্ট্রোক এবং যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত পেঁপে খেতে পারেন। এতে হার্টের সমস্যা ভালো হবে।
চোখের সমস্যা সমাধান করে
এই ফলটিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। আমরা সবাই জানি যে ভিটামিন এ এর অভাবে আমাদের রাতকানা রোগ হয়। তাই নিয়মিত পেঁপে খেলে রাতকানা রোগ হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। কারণ ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। যাদের অল্প বয়সেই চশমা ব্যবহার করতে হয় তারা নিয়মিত পেঁপে খেতে পারেন।
হজম ঠিক রাখে
আমরা যে খাবার খায় তা সঠিভাবে পরিপাক বা হজম হওয়া দরকার। ভালোভাবে খাবার হজম হলে শরীর সুস্থ থাকে। ভালো হজম না হওয়ার কারণে অনেক সময় পেতে সমস্যা হয়। যাদের অর্শ রোগ আছে তারা পেঁপে খেতে পারেন। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে গেলেই শরীর ভালো থাকবে। পেঁপে খেলে হজম বেশি হয় এবং খাবার খেতে ইচ্ছে করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে পেঁপে। পেঁপেতে কোনো ক্যালোরি থাকে না এতে প্রচুর ফাইবার থাকে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলে অন্য যেকোনো রোগ হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। যাদের কোলেস্টেরল এর সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত পেঁপে খাবেন এতে ভালো উপকার পাবেন।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্লেভানয়েড, বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন, ক্রিপ্টোক্সান্থিন ইত্যাদি রয়েছে পেঁপেতে। এছাড়াও আরো অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে পেঁপেতে। পেঁপেতে থাকা ক্যারোটিন ফুসফুস ক্যান্সারসহ অন্য সব ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাই আমাদের শরীরে পেঁপে খুব জরুরি উপাদান।
ওজন কমানোর জন্য পেঁপে খাবেন
আমাদের যাদের ওজন অনেক বেশি তাদের ওজন কমানোর উপায় জানা দরকার। ওজন কমানের জন্য আপনি নিয়মিত পেঁপে খেতে পারেন। পেঁপের মধ্যে কোনো ক্যালোরি না থাকায় ওজন বাড়ার কোনো স্বভাবনা নাই। কিন্তু পেঁপে হজমের উন্নতি করে।
ত্বক ভালো রাখে পেঁপে
পেঁপের মধ্যে থাকে ভিটামিন সি যা আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী। পেঁপেতে থাকা ভিটামিন এ এবং প্যাপিন উপাদান মৃত কোষকে সরিয়ে ফেলে ত্বক ঠিক রাখে। পেঁপে ত্বকের আদ্রর্তা বজায় রাখে।
চুলের যত্নে পেঁপের ব্যবহার।
চুলের উজ্জলতা বাড়াতে পেঁপে ব্যবহার করা হয়। টক দই এবং পেঁপে একসাথে মিশিয়ে চুলে দিলে চুলের গুঁড়া শক্ত হয়।
পেঁপে খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের পেঁপে খাওয়ানো উচিত নয়। কারণ পেঁপেতে অনেক ফাইবার থাকে যা শিশুদের জন্য ক্ষতিকারক। গর্ভবতী মেয়েদের জন্য পেঁপে খাওয়া নিষেদ। গর্ভবতী মেয়েরা পেঁপে খাওয়ার কারণে গর্ভপাত গোটার সম্বভনা থাকে। যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা রয়েছে তারাও পেঁপে খাবেন না। এতে শ্বাসকষ্ট আরো ভরে যেতে পারে। পেঁপে টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগী পেঁপে বেশি খাবেন না। কারণ এতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পেঁপে নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
পেঁপেতে কি কি উপাদান রয়েছে ?
পেঁপেতে অনেক উপাদান রয়েছে যেমন, ভিটামিন এ, সি, এবং ভিটামিন ই। এছাড়াও রয়েছে ফাইবার, এন্টিঅক্সিডেন্ট, জিয়াক্সনাথিন, বেটা ক্যারোটিন, লুটেইন ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় পেঁপে খেলে কি হয় ?
গর্ভাবস্থায় পেঁপে খেলে অনেক বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। কাঁচা পেঁপেতে থাকে প্যাপেইন। এই প্যাপেইন দেহের জিল্লি ক্ষতিগ্রস্ত করে। পেঁপেতে থাকে ল্যাটেক্স যা জরায়ুর সংকোচন, রক্তপাত এবং গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
পেঁপে আমাদের খুব পরিচিত একটি ফল। এটি যেকোনো বাজারে কম দামে কিনতে পাওয়া যায়। পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমানে পেঁপে খাওয়া যাবে না। নিয়ম মেনে পরিমান মতো পেঁপে খেতে হবে। অতিরিক্ত পেঁপে খেলে উপকারের থেকে বেশি অপকার হতে পারে।