মেথির উপকারিতা ও মেথির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সঠিক তথ্য
মানব জীবনে মেথির উপকারিতা অনেক বেশি। মেথি এমন এক উপাদান যা আমরা খাদ্য, চিকিৎসা ও রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করে থাকি। মেথি গ্রাম ও শহরের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত ও ব্যবহার্য উপাদান। আমি আজকে মেথি সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যার ফলে আপনারা মেথি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
মেথি কি
মেথির বৈজ্ঞানিক নাম (Trigonella foenum-graecum). পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান হলো মেথি। মেথি হচ্ছে এক ধরনের ঔষধি উপাদান। সব জায়গায় মেথি উৎপাদন হয় না। মূলত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিন ইউরুপের বিভিন্ন দেশে মেথি বেশি উৎপন্ন হয়। মেথি একটি মৌসুমি ফসল। এটি বছরে একবার চাষ করা যায়৷ মেথির পাতা শাক হিসাবে খাওয়া হয়। এবং এর বীজ রুপচর্চার কাজে ব্যবহৃত হয়। মেথি খেতে তিতা হয়।
মেথি কোথায় পাওয়া যায় এবং মেথির দাম
যেকোনো দোকানে মেথি পাওয়া যাবে না। মেথি পাওয়া যাবে হলো কসমেটিক্স, হারবাল, ঔষধ ফার্মেসী এবং দেশি বিভিন্ন অনলাইন শপে।
প্রতি কেজি মেথির গুড়ার দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এছাড়াও মেথির বীজ প্রতি কেজি ২৩০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা খুচরা মূল্য। পাইকারি মূল্য হবে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।
মেথির বিভিন্ন গুনাগুন
মেথির পুষ্টিগুণ শুনলে আপনি অবাগ হয়ে যাবেন। কেননা মেথিতে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। যেমন -এক টেবিল চামচ মেথিতে রয়েছে-
- ৩৫ ক্যালোরি
- ৩ গ্রাম ফইবার
- ৩ গ্রাম প্রোটিন
- ৬ গ্রাম কার্বস
- ১ গ্রাম ফ্যাট
এছাড়াও মেথিতে রয়েছে আয়রন, ম্যাঙ্গাজিন, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ভিটামিন বি৬ এবং ফসফরাস।
মেথি খাওয়ার নিয়ম
যেকোন খাবার খাওয়ার একটি নিদিষ্ট নিয়ম আছে। অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া ভালো না। যেমন,
- ওজন কমানোর জন্য মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে খালি পেটে মেথির ভেজানো পানি খাওয়া।
- মেথি চিবিয়ে খাওয়া।
- মেথিকে সালাতের সাথে খাওয়া যেতে পারে।
- মেথি শুকিয়ে ঘুড়ো করে মসলা হিসাবে মাংসে ব্যাবহার করা।
মেথি দিয়ে অনেক কিছু রান্না করা যেতে পারে যেমন
- মাংসঃ মুরগির মাংস রান্না করার পর যখন রান্নাটি প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আসবে। তখন এতে কিছুটা মেথি পাতা কুঁচি করে দিয়ে দিলে মাংসের পুষ্টি গুন অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া মেথি শুকিয়ে ঘুড়ো করে মাংসে ব্যবহার করা যায়। এর ফলে মাংসের স্বাদ বৃদ্ধি পায়।
- পরোটাঃ সকালের নাস্তা হিসাব পরোটা বিখ্যাত। সকালের নাস্তায় পরোটা পছন্দ করে এমন লোকের সংখ্যা অনেক। তৈলাক্ত এই খাবারের পুষ্টি গুন বাড়াতে পরোটার সাথে মেথি পাতা কুঁচি করে কেটে দেওয়া যায়।
মেথির কয়েকটি শারীরিক উপকারিতা
আমরা মেথির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনেছি। এবং এর উপকারীতা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছি। একজন ব্যক্তি যদি নিয়মিত সঠিক নিয়মে মেথি খেতে পারে। তবে তা ঐ ব্যাক্তির শরীরের জন্য অনেক উপকারী হবে। মেথির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা নিচে দেওয়া হলোঃ
ওজন কমাতে মেথির উপকারিতা
আমাদের যাদের ওজন বেশি তারা সবসময় ক্ষুধার সমস্যায় ভুগি। তাই খাবারের আগে যদি মেথি-র চা করে খেয়ে নেওয়া হয়। তবে দেখা যাবে যে অনেক আংশে ক্ষুদা কমে যাবে। এবং অল্প খেয়ে পেট বরা যাবে। তাই ওজন কমাতে মেথি খাওয়া দরকার।
ডায়াবেটিসে মেথির উপকারিতা
আমাদের দেশে দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মেথি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন মেথি দোহের গ্লুকোজ এর মাত্রা কে হ্রাস করে। এবং ইনসুলিনের কর্যকরীতা বাড়ায়।
উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের ঝুঁকি কমায়
মেথি মানব দেহে কলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ও রক্তচাপের উন্নতি করতে সাহায্য করে। যা মানব দেহের হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমায়। পাশাপাশি মেথি আমাদের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রে সাহায্য করে।
মেথি শুক্রাণু বাড়াতে সাহায্য করে
যেসকল পুরুষদের শারীরিক সমস্যা রয়েছে। তারা যদি প্রতিদিন পর্যপ্ত পরিমানে মেথি সেবন করে। তবে তাদের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়বে। মেথিতে রয়েছে সাপোনিস’ বা ‘ডাইওসজেনিন’ নামে এক ধরনের যৌগ পদার্থ। যা মানব দেহে হরমোনের উন্নতি করে। আমাদের দেহে মেথি টেস্টোস্টেরন এর মাত্ৰা বাড়াতে সাহায্য করে। পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা অনেক বেশি।
প্রথমবার সন্তান প্রসব করা মায়ের জন্য
আমরা সকলেই জানি যে মায়ের দুধে রয়েছে সর্বোচ্চ পরিমান পুষ্টি উপাদান। যারা প্রথমবার গর্বপাত করে তাদের পর্যাপ্ত পরিমান দুধ থাকে না। এই পর্যায়ে যদি মা চায়ের সাথে মেথি মিসিয়ে খায়। তবে তার বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
ত্বকের যত্নে মেথির উপকারিতা বা রূপচর্চায় মেথির ব্যবহার
মেথি আমাদের শরীরের পুষ্টি গুন বাড়ায়। পাশাপাশি ত্বকের জন্যও অনেক উপকারী। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে মেথি অনেক ভালো কাজ করে। তাহলে আসোন রূপচর্চায় মেথি নিয়ে আলোচনা করা যাক
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে মেথি
মেথি এমন এক উপাদান যাতে রয়েছে ভিটামিন-সি। যা আমাদের ত্বকের রংকে হালকা করতে সাহায্য করে। ও ত্বকের একটি সুন্দর আভা আনতে সাহায্য করে। কিছু পরিমান মেথি নিয়ে একটি বাটিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবং একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর ফেসিয়াল মাস্ক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। ভালো ফলাফল পেতে মেথির পেস্টের সাথে দুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের অনেকের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। আর ত্বক থেকে এই ভাব দূর করতে প্রতি দিন মেথির পেষ্ট তৈরি করে ব্যবহার করোন।
স্কিন মশ্চারাইজ করতে
স্কিন যদি রুক্ষ ও শুষ্ক থাকে। তবে স্কিনে মেথির পেস্ট লাগালে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। তার জন্য মেথির পেস্টের সাথে মধু, দুধ ব্যাবহার করতে হবে।
মেথির উপকারিতা মুখের জন্য
বেশিক্ষণ বাহিরে থাকলে আমাদের দেহে রোদে পুরা দাগ হয়ে যায়। এই দাগ দূর করতে দুই টেবিল চামচ পরিমান মেথি কিছুটা পানিতে সিদ্ধ করোন। এর পর সিদ্ধ পানি টুকো ফ্রিজে সংরহ করোন। ঠান্ডা হয়ে এলে এই পানি হতে এক চা চামচ পানি ও এক চা চামচ ওলিভ ওয়েল দিয়ে মিশ্রন তৈরি করে নিন। এর পর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন আপনার মুখে ও হাতে লাগিয়ে ঘুমান। এভাবে কয়োক মাস লাগান দেখবেন আপনার দাগ গুলো একেবারে কমে যাবে।
চুলের জন্য মেথির উপকারিতা
মেথি আমাদের চুলের অনেক উপকার করে। চুল পরার সমস্যা থেকে সমাধান দেয়। মেথি ও তেল এক সাথে গরম করে চুলের ঘুরায় লাগালে চুলের গুরা শক্ত করে চুল পড়া বন্ধ করে।
মেথির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ( Fenugreek Side Effects )
মেথির অনেক উপকারীতা থাকলেও এর বেশ কিছু পার্শ্বপতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন-
- মেথি খাওয়ার পর অনেকের ডায়রিয়া এর সমস্যা হয়ে যায়।
- আবার অনেকের হজমের সমস্যা হয়ে থাকে।
- যাদের খাবার খেতে মন চায়না বা খাবারে অরুচি তারা মেথি খেলে রুচির সমস্যা আরে বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত মেথির ব্যবহার করলে ব্লাডে সুগারের পরিমান কমে যেতে পারে।
- শরীরে দুর্গন্ধ হতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলারা বেশি মেথি খেলে গর্বপাত গঠতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
সর্বশেষ একটি কথা, মেথি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমান মতো খাওয়াই উত্তম ও স্বাস্থকর।
আজকে এই পর্যন্তই। মেথির উপকারিতা নিয়ে যেটুকু লিখেছি আশা করি বুঝাতে পেরেছি। লিখাটি পরে ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন। মেথি সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন। আমরা আপনার সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।