রসুনের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুনের বিস্তারিত বর্ণনা
রসুন হল সাধারণত আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। স্বাস্থ্য রক্ষায় রসুনের উপকারিতা ব্যাপক। রান্নার কাজ থেকে শুরু করে প্রায় সব ক্ষেত্রেই রসুনের ব্যবহার কম বেশী হয়ে থাকে। রসুনে রয়েছে থিয়ামিন, ভিটামিন বি 2, নায়াসিন, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি ৬ এবং সেলেনিয়াম এর মত সব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সেলেনিয়াম এমন একটি উপাদান যা সাধারণত ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাছাড়া রসুনের মধ্যে রয়েছে এলিসিন নামের এক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা ক্যান্সারসহ শারীরিক নানা সমস্যা দূর করতে অনেক কার্যকর। তাই এলিসিন নামের যে কম্পাউন্ড রসুনে পাওয়া যায় তার কারণেই রসুন কে সাধারণত সুপারফুডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
যদি প্রাচীন ইতিহাসে হাটা যায় তাহলে জানতে পারবেন। তখনকার সময়ের রসুন বিভিন্ন ধরনের রোগ সারানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। রসুনের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাছাড়া যদি সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়া যায় এর ফলে যে আপনার শরীর কত ধরনের উপকারিতা পাবে তা আপনি নিজেও জানেন না।
রসুনের উপকারিতা এবং অন্যান্য গুণাবলী
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
সাধারণত রসুনে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং আ্যান্টিফাঙ্গাল গুন থাকে। যা অনেকটাই ওষুধের মতো কাজ করে। এবং যার মাধ্যমে সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর আপনি যদি খালি পেটে রসুন খেতে পারেন তাহলে এর সর্বোচ্চ উপকারিতা আপনি পাবেন। তাছাড়া রসুনে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যার মাধ্যমে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে আর রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা ভালো থাকলে শরীর এমনিতেই সুস্থ থাকবে।
রক্ত সঞ্চালনে রসুনের উপকারিতা
আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেতে পারেন। তাহলে আপনার রক্ত সঞ্চালনের ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পাবে। ফলে রক্ত বাধাগ্রস্ত হয়ে যেসব রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সেসব রোগগুলো থেকে আপনি নিমিষেই মুক্তি পেয়ে যাবেন।
পুরুষের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে
রসুনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো রসুন শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। সাধারণত পুরুষের যৌন ক্ষমতা নানান কারণে কমে যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া করে রসুন নিয়মিত খেতে পারেন। আস্তে আস্তে আপনার যৌন ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে থাকবে। এটা নিয়ে সাধারণত অনেকের মধ্যে দুই ধরনের মতামত থাকলেও পুরুষের ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে রক্তের স্বাবলিল গতি। রসুন সাধারণত এই কাজটা খুবই ভালভাবে করে থাকে যার কারণে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেক্সে রসুনের উপকারিতা অপরিসীম।
হৃদপিন্ডের শক্তিবর্ধক
যারা সাধারণত হৃদপিন্ডের ছোটখাট সমস্যা নিয়ে বিব্রত হয়ে আছেন। মাঝে মধ্যে বুকের বাম পাশে ব্যথা অনুভূত হয়ে। সিঁড়ি বেয়ে অনেকের উঠতে কষ্ট হয়। তারা যদি প্রতিদিন সকালে বাসি পেটে দুই কোয়া রসুন পানির সাথে গিলে খান। তাহলে হৃদপিণ্ড ও অনেক শক্তিশালী হবে। এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির কারণে হৃদপিন্ডের ব্লকগুলো আর বাড়তে পারবে না। যার ফলে আপনার হৃদপিণ্ড অনেক শক্তিশালী হবে। এবং আপনি এসব সমস্যা গুলো থেকে খুবই দ্রুত মুক্তি পেয়ে যাবেন।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে
সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় আমরা কমবেশি সবার হয়ে থাকে। রসুন হল উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য একটি দারুন উপাদান। যখন শরীরে এলডিএলের সংখ্যা বেড়ে যায় তখন উচ্চরক্তচাপ হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেতে পারেন তাহলে এই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে আপনি খুবই দ্রুত মুক্তি পাবেন।
আরও পড়ুন কিভাবে তৈরি করবেন মজাদার ছাগলের টেংরির ঝোল ৭ টি উপায়
সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
সাধারণত মানুষের শরীরের যেকোন সময় যেকোন ধরনের সংক্রমণ ঘটতে পারে। সংক্রামক আসলে কোন ধরনের রোগ নয়। এটি এমন একটা অবস্থা যার কোনো পূর্ব লক্ষণ থাকে না। প্রতিদিন সকালে যদি দুই কোয়া রসুন খাওয়া যায় তাহলে শরীরের সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়ে থাকে।
ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
এলার্জি সমস্যা, ঠান্ডা লাগার সমস্যা, ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আপনার ফুসফুসের সংক্রমণ হতে পারে। যা থেকে মুক্তি পেতে হলে রসুন পিষে রস করে খেলে সংক্রমনের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে। রসুনের সঙ্গে হলুদ গুঁড়া গরম পানি দিয়ে চায়ের মত করে যদি খাওয়া যায় তাহলে আর সংক্রমণ থাকেনা। আর প্রতিদিন যদি দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খাওয়া যায় তাহলে একটি ফুসফুসের সংক্রমণ রোধ করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
রক্ত পরিশোধিত করতে সাহায্য করে
প্রতিদিন যদি দুই কোয়া রসুন খাওয়া যায় তাহলে আপনার রক্ত শুদ্ধ হতে শুরু করে। এতে করে সাধারণত রক্তের পরিষদের ক্ষমতা বেড়ে গিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে। যার ফলে শরীর ভালো থাকে আর সাধারনত রোগমুক্ত দেহের জন্য সাবলীল রক্তচলাচল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে
প্রতিদিন পরিমাণ মতো রসুন খাওয়ার ফলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে। তাছাড়া রসুন খাওয়ার মাধ্যমে ত্বকের সহসায় বলিরেখা পড়ে না এবং এটা বাধ্যক্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
শরীরের অবাঞ্ছিত ফোলা বা গোটা রোধ করে
অনেকে শরীরের সাধারণত বিভিন্ন জায়গায় ফোলা পিণ্ড থাকে। আর এটা সাধারনত বেড়েই থাকে, ব্যথা করে না কিন্তু ফোলাটা মিশে যায় না। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রতিদিন ছয় থেকে আট কোষ রসুন খালি পেটে এবং দুপুর ও রাতে খাবার পর দুইটি রসুন খেলে ফোলাটা আস্তে আস্তে মিশে যাবে। তাছাড়া আপনার এই ভাবে যদি রসুন খেতে অসুবিধা হয় আপনি দুই কোয়া রসুন ভেজে খেতে পারেন।
সেলের ড্যামেজ রোধ করে থাকে
রসুনের ভেতর উপস্থিত থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান সেল ড্যামেজ ও এজিং রোধ করে থাকে। প্রতিদিন যদি দুই গ্রাম করে রসুন খাওয়া যায় তাহলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রার ভারসাম্য থাকে। যাদের কম থাকে তাদের কিছুটা বাড়ে। যার ফলে হার সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। এমনকি যে নারীদের মেনোপোজ হয়ে গেছে , তারা যদি নিয়মিত রসুন খাওয়া শুরু করে তাদের অনেক উপকার হবে।
আরও পড়ুন চিংড়ি মাছের মালাইকারি সব থেকে সেরা ৭ ধাপে
হাড়ের জোড় বাড়িয়ে থাকে
সাধারণত বয়স যখন বেশি হয়ে যায় এক সময়ে হাড়ের জোর আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে। দেখা গিয়েছে যদি দুই গ্রাম করে রসুন খাওয়া যায় তাহলে মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
ব্রণের সমস্যা দূর করে থাকে
যাদের সাধারণত ব্রণ বা পিম্পল এর মতো সমস্যা রয়েছে। তারা ব্রণ বা পিম্পল এর চিকিৎসায় রসুন ব্যবহার করতে পারেন। ব্রণ বা পিম্পল এর মুখে রসুন কেটে যদি খানিকক্ষন ধরে রাখা যায় তাহলে জ্বালা অনেক কমে যায়। রসুন সাধারণত ত্বকের কোলাজেন রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই রসুনকে বলা যেতে পারে অ্যান্টিএজিংয়ের অন্যতম উপাদান।
রসুনের অপকারিতা
উপকারী এই রসুনের উপকারী গুনের সাথে কিছু অপকারী গুনও রয়েছে। অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। রসুনের এসব সমস্যা এড়ানোর জন্য পরিমান মতো রসুন খেতে হবে। রসুনের কিছু অপকারিতা যেমন, অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার কারণে যকৃতের সমস্যা, ডায়রিয়া, বমি ও বুক জ্বালাপোড়া এবং মুখে দুর্গন্ধসহ আরো অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার কারণে রক্তের ঘনত্ব কমে যায়। তাই রক্তপাত বেশি হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। মেয়েরা গর্ভবতী অবস্থায় রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো। গর্ভবতী অবস্থায় রসুন খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে প্রসব বেদনা বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানকালীন রসুন খেলে দুধের স্বাদ পাল্টে যায়।
আরও পড়ুন পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
রসুনের উপকারিতা বা রসুন নিয়ে মানুষের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
রাতে রসুন খেলে রসুনের উপকারিতা কি ?
খুব উপকারী একটা মসলা হলো রসুন। কাঁচা রসুন খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। রাতে ঘুমানোর আগে কাঁচা রসুন খেলে যৌবন শক্তি বৃদ্ধি পায়। সহবাস করার সময় বাড়াতে রসুন খুব উপকারী। কাঁচা রসুন খেতে না পারলে পানি দিয়ে গিলে ১-২ খুয়া খেতে পারেন ২-৩ মাস। এতে যৌবন শক্তিসহ আরও অনেক শারীরিক উপকার পাবেন।
রসুন খাওয়ার সঠিক সময় কখন?
রসুন খাওয়ার সঠিক সময় হলো খালি পেটে খাওয়া। খালি পেটে রসুন খেলে সব থেকে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে রসুন খাওয়া ভালো। খালি পেটে রসুন খেলে শরীরে অ্যান্টিবায়েটিক হিসাবে কাজ করে।
আমাদের শেষ কথা
রসুনের উপকারিতা কথা বলে শেষ করা যাবে না। প্রায় সব ক্ষেত্রেই রসুনের ব্যবহার হয়ে থাকে। রসুনকে গরিবের অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয়ে থাকে । ছোট এই জাদুকরী উপাদানটি আমাদের শরীরের যে কত উপকার সাধন করে থাকে তা আমরা নিজেরাও জানিনা। রসুন কাঁচা বা রান্না করে আপনি যেভাবে খান না কেন আপনার শরীরের উপকার ঠিকই পাবে। তাই রান্নার রসুনের ব্যবহারের পাশাপাশি নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করুন।