তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিস্তারিত বর্ণনা
তুলসী একটি ঔষধি উদ্ভিদের নাম। আমরা প্রায় সবাই তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানি। আমাদের আশেপাশে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই তুলসী গাছ রয়েছে। এই গাছটির পাতা বা শিকড় প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আজকে আমরা তুলসী গাছ, পাতা এবং তুলসী গাছের শিকড়ের উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। এই গাছটি বিভিন্ন ঔষধ হিসাবে যেহেতো কাজ করে তাই গাছটির পরিচর্চা ও যত্ন নিবেন। দেখবেন আল্লাহর রহমতে একসময় এই গাছটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।
তুলসী পাতা (Basil leaves)
উপকারী এই তুলসী গাছের ইংরেজি নাম হলো (holy basil)। Ocimum Sanctum হলো তুলসী গাছের বৈজ্ঞানিক নাম। তুলসী শব্দের অর্থ হলো যার তুলনা নেই। তুলসী একটি ঔষধ জাতীয় উদ্ভিদের গাছ। তুলসী গাছ লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে তুলসী গাছ খুব পবিত্রতার প্রতীক। ২/৩ ফুট উচ্চতার এই গাছটি ঘন শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট একটি চিরহরিৎ গুল্ম। তুলসী পাতার দৈর্ঘ্য ২ থেকে ৪ সেন্টিমিটার হয় এবং পাতার কিনারা খাঁজকাটা হয়। তুলসী গাছে বিভিন্ন স্তরে ফুল ফুটে এবং ফুলের একটি ঝাঁজালো গন্ধ হয়। অন্য গাছের তুলনায় তুলসী গাছ বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে। তুলসী গাছকে অনেক অক্সিজেনের ভান্ডারও বলে থাকেন।
তুলসী পাতার ব্যবহার (Use of basil leaves)
বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসাবে তুলসীর পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। সব থেকে বেশি ব্যবহার হয় যে রোগের জন্য তাহলো জ্বর, সর্দি, কাঁশি এবং ঠান্ডা। তুলসী গাছ থেকে ব্যবহৃত অংশ হলো পাতা, রস এবং বীজ। তুলসী গাছের রস কৃমিনাশক হিসাবে কাজ করে। বাংলাদেশে ৪ প্রকারের তুলসী গাছ দেখা যায় যাদের মধ্যে হলো কৃষ্ণ-তুলসী, বাবুই তুলসী, শ্বেত তুলসী এবং রামতুলসী।
তুলসি পাতার উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন (Benefits and medicinal properties of basil leaves)
স্ট্রেস কমায়
তুলসী পাতার মধ্যে এক প্রকার হরমোন থাকে যার নাম হলো অ্যান্টি-স্ট্রেস হরমোন। তুলসী পাতা এই হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যার কারণে স্ট্রেস লেভেল কমতে শুরু করে। তুলসী পাতাতে রয়েছে অ্যান্টি স্ট্রেস এজেন্ট। এই উপাদান রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে শরীরের ক্ষতিকর পদার্থের শক্তি কমে যায়। এবং শরীর ভালো থাকে।
তুলসী পাতা হার্ট ভালো রাখে
উপকারী তুলসী পাতার মধ্যে রয়েছে সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা হার্টকে অনেক সমস্যা থেকে সুস্থ রাখে। তুলসী পাতা হার্টের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
কিডনির পাথর
এই পাতাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়। প্রতিদিন মধুর সাথে তুলসী পাতা খেলে কিডনির পাথর ভালো হয়ে যায়। তুলসী পাতায় থাকা ডিটক্সিফাইং এজেন্ট শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্ৰা কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ভয়ও অনেকটাই কমে যায়।
ক্যানসার রোগ প্রতিরোধ করে
তুলসী পাতার মধ্যে আছে প্রচুর ন্টি-কার্সিনোজেনিক প্রপাটিজ এবং অ্যান্টি-অ্যাক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষণা অনুসারে জানা যায় ব্রেস্ট এবং ওরাল ক্যানসার কমানো সম্ভব তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে। প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে এক গ্লাস তুলসী পাতার রস খাওয়া ভালো তাহলে শরীর ভালো থাকে।
তুলসী পাতা ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করে
আমরা জানি যে সুগারের জমি হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেতে পারি তুলসী পাতা থেকে। তাহলে বলা যায় যে তুলসী পাতা খেলে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তুলসী পাতা খেলে রক্তে শর্করার পরিমান কমতে থাকে। কিন্তু অনেক বেশি তুলসী পাতা খেলে রক্তের শর্করার পরিমান বেশি কমে যাবে। এতে শরীরের সমস্যা হতে পারে।
জ্বর ও ঠাণ্ডা লাগা কমায়
জ্বর ঠান্ডা কমানোতে তুলসী পাতার ভূমিকা অপরিসীম। তুলসী পাতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। যার ফলে যেকোনো ছুতো খাটো রোগ আমাদের কিছুই করতে পারে না। তুলসী পাতার অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটি আমাদের বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করে
তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে মুখের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া মারা যাই। ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। মুখ পরিষ্কার থাকে। মুখের দাঁত ও মারি ভালো থাকে।
মাথা যন্ত্রণা কমায়
তুলসী পাতা মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তুলসী পাতার প্রয়োজনীয় উপাদান মাংসপেশির খেচুনি ভালো করে।
চোখের রোগ প্রতিরোধ করে
উপকারী এই তুলসী পাতাতে আছে ভিটামিন এ। আমরা জানি যে চোখের রোগের সব থেকে বড় কারণ হলো ভিটামিন এ এর অভাব। কারো শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব থাকলে তার রাতকানা রোগ বা চোখের যে কোনো রোগ হয়। Tulsi পাতাতে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ। তাই চোখের রোগ প্রতিরোধে আমাদের তুলসী পাতা খাওয়া জরুরি।
Tulsi পাতা ত্বকের সমস্যা সমাধান করে
ত্বকের সমস্যা সমাধানে tulsi পাতার রস খুব ভালো কাজ করে। মুখ সুন্দর ও মসৃন হওয়ার জন্য tulsi পাতা ভেটে মুখে রস লাগানো যেতে পারে। ত্বকের যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য তিলের তেলের মধ্যে তুলসী পাতা গরম করে লাগানো যেতে পারে। এছাড়াও যেকোনো পোড়া জায়গাতে নারিকেলের তেল এবং তুলসী পাতার রস লাগালে পোড়া দাগ ভালো হয়ে যায়।
তুলসী পাতার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। সব কিছু খাওয়ার একটা পরিমান আছে। ঠিক তেমনি তুলসী পাতা খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। তুলসী পাতা ব্যবহারের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের এই সীমাবদ্ধতা জানতে হবে। তুলসী পাতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানতে হবে। আসুন তাহলে জেনে নেই তুলসী পাতার কিছু ক্ষতিকর দিক।
গর্ববতী মায়ের জন্য তুলসী পাতা।
তুলসী পাতা উপকারী হলেও গর্ববতী মায়ের জন্য এটা ক্ষতিকর। তুলসী পাতার ব্যবহার গর্ববতী মায়ের জন্য বিপদ ডেকে আন্তে পারে। তাই এই সময় মেয়েদের তুলসী পাতার ব্যবহার ঠিক না। তুলসী পাতা গর্বপাতের কারণ হতে পারে। গর্ভবস্থায় তুলসী পাতার ব্যবহারে ভ্রূণের ক্ষতি হয়। এই পাতার এস্ট্রাগোল নামক উপাদান জরায়ু সংকোচনের কারণ হতে পারে।
রক্তের ঘনত্ব হ্রাস করে।
তুলসী পাতা রক্তের ঘনত্ব কমায়। রক্ত পাতলা করে দেয়। তাই যারা রক্ত পাতলা করার ঔষধ ব্যবহার করতেছেন তারা তুলসীপাতা ব্যবহার করবেন না। এতে ঝুঁকি রয়েছে।
যকৃতের ক্ষতি করে।
তুলসী পাতা ব্যথানাশক হিসাবে কাজ করে। তাই যারা অলরেডি ব্যথানাশক ঔষধ খাইতেছেন তারা তুলসী পাতা খাবেন না। এতে ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।
এছাড়াও তুলসী পাতার কিছু খারাপ দিক আছে। এগুলো হলো দাঁতে দাগ পরে, ডায়বেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
তুলসী খুবই উপকারী একটি উদ্ভিদ।তুলসী পাতা এবং শিকড় দুটুই খুব উপকারী আমাদের জন্য। তাই আমরা আমাদের বাড়ির চারপাশে তুলসী গাছ লাগাবো। এতে যেমন বৃক্ষরূপন হবে ঠিক তেমন আমাদের ঔষধি প্রয়োজন মিটবে। তুলসী পাতা বা গাছ সম্পর্কে আপনাদের আরো জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।